নিউজলেটার

EN

বাংলাদেশের অর্থনীতিকে খাদে ঠেলছে এলএনজি-নির্ভরতা

চলতি বছর বাংলাদেশ তার প্রথম তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসভিত্তিক (এলএনজি) বিদ্যুৎ কেন্দ্র পেতে যাচ্ছে। এই কেন্দ্র এমন এক সময়ে মিলছে, যার চেয়ে বাজে সময় আর হয় না, বলছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। চাহিদার তুলনায় অধিক বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ও জীবাশ্ম জ্বালানি আমদানির প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশের এখনকার অর্থনৈতিক সংকটকে আরও তীব্র করে তুলবে; কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বাজে মূল্যস্ফীতিতে হিমশিম খাওয়া সাধারণ জনগণকে ফেলবে আরও বিপাকে।

রিজার্ভের ডলার যখন দ্রুত ফুরিয়ে আসছে, তখন চাহিদার দ্বিগুণ বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা আর আমদানিকৃত এলএনজিনির্ভর বিদ্যুৎ কেন্দ্র, যেখানে ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকছে, কোনোভাবেই বাংলাদেশের দরকারের তালিকায় থাকতে পারে না। অথচ আগামী ৮ মাসের মধ্যে ৪টি এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে, যার দরুন আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতাও বাড়ছে আরও ২ হাজার ৬৮৫ মেগাওয়াট।

এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো চালু হওয়ার মানে হচ্ছে, ক্যাপাসিটি চার্জের বোঝা আরও প্রায় ২৯৫ মিলিয়ন ডলার বেড়ে যাওয়া। বিদ্যুৎ উৎপাদন হোক বা না হোক, বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে যে সুনির্দিষ্ট খরচ দিতেই হয়, সেটাই ক্যাপাসিটি চার্জ। বছরজুড়ে উৎপাদন সক্ষমতা ১০% বাড়ানোর পরও, গত বছর বাংলাদেশের ২৫ হাজার ৯৫১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার প্রায় অর্ধেকই অব্যবহৃত ছিল। গত বছর সরকারকে ক্যাপাসিটি চার্জও দিতে হয়েছিল ১ হাজার ৫৬৩ মিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় এক পঞ্চমাংশ বেশি।

ইমরান হোসেন

জ্বালানি ঘাটতিতে বেকার বিদ্যুৎ কেন্দ্র 

বিপুল উৎপাদন সক্ষমতা থাকার পরও বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে ঘাটতি দেখা যায়, বিশেষত গ্রীষ্মকালে; অপর্যাপ্ত ট্রান্সমিশন ও সরবরাহ নেটওয়ার্ক এর অন্যতম কারণ হলেও গত বছর এই ঘাটতির মূল কারণ ছিল, জ্বালানি স্বল্পতার কারণে ডজন ডজন বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বেকার বসে থাকা।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা এই সংকট সম্পর্কে আগেই আন্দাজ করছিলেন এবং বারবার এ নিয়ে সতর্কও করেছিলেন, বিশেষ করে বাংলাদেশ যখন অতীতে তাদের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত সংশ্লিষ্ট মহাপরিকল্পনাগুলো ঘোষণা করেছিল। অনেকাংশেই জীবাশ্ম-জ্বালানিনির্ভর এসব পরিকল্পনাই জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সি (জাইকা) বানিয়ে দিয়েছিল।  

যে কোনো বিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন তোলা আটকাতে ইনডেমনিটি আইন (আইনি ছাড়) পুনর্বহাল করে সরকার প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নিলাম ব্যতিরেকেই একের পর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রকল্প পাস করে গেছে, যার দরুন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের কিম্ভূতকিমাকার বিস্তৃতি ঘটেছে।

ফলশ্রুতিতে ২০০৯ সালের পর বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ছয়গুণ বাড়লেও এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ট্রান্সমিশন ও সরববরাহ নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করা হয়নি।

ফুরাচ্ছে রিজার্ভের ডলার 

অনেক জ্বালানি বিশেষজ্ঞ তৃতীয় যে সংকটের দিকে আঙুল তুলছেন, সেটি হচ্ছে- সরকারের ত্রুটিপূর্ণ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নীতি যার কারণে বেহিসেবি খরচ করতে হচ্ছে; আর এর প্রায় পুরোটাই করতে হচ্ছে ডলারে, এবং এতে লাভের গুড় শেষ পর্যন্ত পিঁপড়ার পেটেই যাচ্ছে। 

দেশের ডলার রিজার্ভ যে দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে এর জন্য যেসব কারণকে দায়ী করা যায়, তার অন্যতম হচ্ছে জ্বালানি আমদানি ও ক্যাপাসিটি চার্জ, যা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বেসরকারি উদ্যেক্তাদের পকেটভারি নিশ্চিত করছে। 

২০১৮ সাল থেকে শুরু করে ৫ বছরে বাংলাদেশ এলএনজি আমদানিবাবদ মোট ১০ হাজার ৭২০ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছে, সরকারি তথ্যের বরাত দিয়ে এমনটিই জানিয়েছে বাংলাদেশ ওয়ার্কিং গ্রুপ অন ইকোলজি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিডব্লিউজিইডি)। 

এলএনজি আমদানিতে বিপাকে অর্থনৈতিক অবস্থা

এতদিন পাইপ দিয়ে গ্যাস সরবরাহের উদ্দেশ্যে জাতীয় গ্রিডে আমদানি করা এলএনজি মেশানো হতো। বাংলাদেশের জ্বালানি চাহিদার প্রায় ৪০ শতাংশই পূরণ করে গ্যাস। সরবরাহকৃত গ্যাসের এক-পঞ্চমাংশ আসে আমদানিকৃত এলএনজি থেকে। বাকি গ্যাস মেলে স্থানীয় গ্যাসফিল্ডগুলো থেকে, যেগুলোর রিজার্ভও দ্রুত শেষ হয়ে আসছে। 

এদিকে আমদানিকৃত এলএনজির এক-চতুর্থাংশ আবার আসে স্পট মার্কেট থেকে।

“চড়ামূল্যে এলএনজি আমদানি করলে স্বাভাবিকভাবেই বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ বাড়বে, এজন্য অবিলম্বে এই পথ থেকে সরে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে,” বলেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

এসবের বাইরে ফ্লোটিং স্টোরেজ রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট- এফএসআরইউয়ের (ভাসমান সংরক্ষণাগার ও পুনরায় গ্যাসে পরিণতকরণ কেন্দ্র) মতো এলএনজি অবকাঠামো বানাতে বাংলাদেশ ৩ হাজার ৪১০ মিলিয়ন ডলারও খরচ করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশ প্রতিদিন ১ হাজার ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহে সক্ষম দুটো এফএসআরইউ থেকে এলএনজি আমদানি করে। এই এফএসআরইউগুলোকে প্রতিদিন ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ দিতে হয় ৪ লাখ ৫০ হাজার ডলার। 

বিডব্লিউজিইডি জানাচ্ছে, বাংলাদেশ ২০২৩ সালে এক ঘনমিটার এলএনজি কিনতে খরচ করেছে শূন্য দশমিক ৭২ ডলার, কিন্তু একই এলএনজি তারা বিক্রি করেছে মাত্র শূন্য দশমিক ১৩ ডলারে।  

“কোনো যুক্তিতেই এই সমীকরণ মেলে না। এমন কোনো পরিকল্পনা কেন নিতে হবে, যা অর্থনৈতিক অবস্থা কেবল খারাপই করবে, একইসঙ্গে ভর্তুকির পরিমাণ বাড়াবে?,” বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছেন বিডব্লিউজিইডি-র সদস্য সচিব হাসান মেহেদি। 

আগের বছরের তুলনায় গেল বছর বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) বাৎসরিক লোকসান চারগুণ বেড়ে ১ হাজার ৭২ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। এখনকার সরকারে থাকা আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর এ পর্যন্ত বিপিডিবি-র বাৎসরিক লোকসান বেড়েছে ১৪ গুণ। 

এই লোকসান এত লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে যে বারবার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েও এর সঙ্গে সমন্বয় করা যাচ্ছে না। ২০০৯ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দামও প্রায় ডজনখানেক বার বাড়ানো হয়েছে।  

ক্রমবর্ধমান বাৎসরিক লোকসানের মানে হচ্ছে আরও ভর্তুকির প্রয়োজনীয়তা। গেল বছর সরকার এ খাতে ৩ হাজার ৬০২ মিলিয়ন ডলার ভর্তুকি দিয়েছে, আগের বছরও যার পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৭০২ মিলিয়ন ডলার। 

চলতি বছর থেকে এলএনজিনির্ভর কয়েক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতাসম্পন্ন কেন্দ্র চালু হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে, কারণ সেসব কেন্দ্রগুলোকেও ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হবে। অথচ বাংলাদেশ এখন অর্থনৈতিকভাবে এলএনজি আমদানি বাড়ানোর মতো অবস্থানে নেই।  ডলার সংকটের কারণে গত বছরই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হয়েছিল, প্রতিদিন ১ হাজার ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানি সক্ষমতার ৩০ শতাংশও ছিল অব্যবহৃত। 

মূলত জ্বালানি সংকটের কারণেই দেশের গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোর অর্ধেক বেকার বসে ছিল। ডলার ঘাটতির কারণে সরকার আরও বেশি তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ব্যবহারে বাধ্য হয়েছিল, যেন রিজার্ভ হ্রাস যতটা সম্ভব দেরি করানো যায়। এসবের পাশাপাশি বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোও কয়েকমাস তাদের প্রাপ্য অর্থ পায়নি। 

এলএনজি আমদানিতে আরও অবকাঠামো

এতসব সংকটের মধ্যেও পুরোপুরি এলএনজিনির্ভর নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো চালাতে বাংলাদেশ এলএনজি আমদানিতে আরও অবকাঠামো নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা এড়াতে পারছে না।

প্রতিদিন ১ হাজার ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট সরবরাহে সক্ষমতাসম্পন্ন আরও দুটি এফএসআরইউ-র নির্মাণ কাজ চলছে, যদিও সেগুলো আরও অন্তত দুই বছরের আগে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত হবে না। এর মানে দাঁড়াচ্ছে, ততদিন এলএনজিনির্ভর বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর সক্ষমতার বেশিরভাগটাই অব্যবহৃত থাকবে। 

চলতি বছর বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতে যে চারটি এলএনজিনির্ভর বিদ্যুৎ কেন্দ্র যুক্ত হচ্ছে, তার মধ্যে তিনটিই হচ্ছে মেঘনাঘাটে- ৫৮৩ মেগাওয়াট, ৫৮৪ মেগাওয়াট ও ৭১৮ মেগাওয়াটের। বাকিটা রূপসা বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ৮০০ মেগাওয়াটের। মেঘনাঘাটের সবগুলো বিদ্যুৎকেন্দ্রই হচ্ছে যৌথ মালিকানায়। এর মধ্যে দুটিতে আছে একই বিদেশি মালিক- জাপানের জেরা। এ কেন্দ্রগুলোর অন্যান্য মালিকদের মধ্যে আছে যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেল ইলেকট্রিক, বাংলাদেশের সামিট পাওয়ার এবং ভারতের রিলায়েন্স গ্রুপ। 

জেরা মেঘনাঘাট ৭১৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৪৯ শতাংশ এবং ৫৮৩ মেগাওয়াটের ২৩ শতাংশের মালিক। 

জাপান যে তাদের নিজেদের স্বার্থের কথা বিবেচনা করেই বাংলাদেশের জন্য একের পর এক জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সংক্রান্ত মহাপরিকল্পনা বানিয়েছে, জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরেই এমন অভিযোগ করে আসছেন। বাংলাদেশে জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে জেরার বিনিয়োগ যেন ওই অভিযোগের পক্ষেই সাক্ষ্য দিচ্ছে। 

জাপান প্রতিবছর যে ৪০ মিলিয়ন টন এলএনজি আমদানি করে, তার ৪০ শতাংশই এনে দেয় জেরা। এই কোম্পানিটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এলএনজি কেনা, উৎপাদন থেকে শুরু করে গ্যাসচালিত বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ এ সংক্রান্ত নানান ব্যবসায় জড়িত। 

ক্ষমতায় থাকা দীর্ঘায়িত করতে বাংলাদেশ সরকার দীর্ঘদিন ধরেই বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতকে ব্যবহার করে দেশের সাধারণ জনগণের অর্থ প্রভাবশালী লোকদের আন্তর্জাতিক সিন্ডিকেটের পকেটে ঢোকাচ্ছে বলে অর্থনীতিবিদ ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা ক্রমাগত অভিযোগ করে আসছেন। এর মধ্যেই ক্ষমতাসীনরা এ বছর টানা চতুর্থ দফায় সরকার গড়েছে। 

ব্যয়বহুল জীবাশ্ম জ্বালানি ও ভুয়া সমাধানে আটকে যাওয়ার পথ করেছে আইইপিএমপি

২০১৬ সালের বিদ্যুৎ খাত সংক্রান্ত মহাপরিকল্পনায় জাইকা প্রায় ১৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের জন্য ১৮টি কয়লাভিত্তিক কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা করেছিল। তবে গত বছরের জুলাইয়ে পাস হওয়া সমন্বিত বিদ্যুৎ-জ্বালানি মহাপরিকল্পনায় জাইকা সেখান থেকে গ্যাসে সরে আসে, এবং গ্যাসকে সবচেয়ে বেশি পরিবেশবান্ধব জীবাশ্ম জ্বালানি অ্যাখ্যা দেয়।

বাংলাদেশি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজনীয়তা সাপেক্ষে একটি অবাস্তব অর্থনৈতিক উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা নেওয়ায় এই এনার্জি মাস্টার প্ল্যানের কড়া সমালোচনা করছে। 

এই মাস্টার প্ল্যান বা মহাপরিকল্পনায় বলা হয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতে আরও ১৫ হাজার মেগাওয়াট যুক্ত করা প্রয়োজন, যার পুরোটাই হবে জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভর। আইইপিএমপির অনুমান, ২০৪১ সালের জ্বালানি চাহিদা মেটাতে আমাদের প্রতিদিন ৮ হাজার ১৪২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস দরকার হতে পারে; এর মাঝামাঝি এক দৃশ্যপটে গ্যাসের চাহিদা থাকতে পারে প্রতিদিন প্রায় ৪ হাজার ৫৪৫ মিলিয়ন ঘনফুট। 

নবায়নযোগ্য শক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রাভিত্তিক পরিকল্পনা বানানোর পরিবর্তে এনার্জি মাস্টার প্ল্যানে ভবিষ্যৎ বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাত বিস্তৃতিতে হাইড্রোজেনের মতো অপরীক্ষিত প্রযুক্তি বেছে নেওয়ায় সিপিডি বিস্ময় প্রকাশ করেছে।  তারা বলছে, অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে গ্যাস সম্পদ অনুসন্ধানের প্রয়োজনীয়তা বাদ দিয়ে মাস্টার প্ল্যান আমদানিনির্ভর জ্বালানির ওপর নির্ভর করছে; এতে এমনকী বিদ্যুৎ খাতের সিস্টেম লস, অধিক উৎপাদন সক্ষমতা কিংবা ভর্তুকি কমানোর রোডম্যাপও নেই। 

মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনায় ২০৪১ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য উৎস থেকেই ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ সরবরাহের যে প্রতিশ্রুতি ছিল, নতুন এই মাস্টার প্ল্যান বা মহাপরিকল্পনা সরকারের সেই অবস্থান থেকেও সরে এসেছে। 

বাংলাদেশে স্থাপিত কেন্দ্রগুলোর এখনকার বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার ৯৭ শতাংশই জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভর; এদিকে মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনায় ২০৩০ সালের মধ্যে মোট বিদ্যুতের ৩০ শতাংশ নবায়নযোগ্য শক্তি থেকে আনার আশা দেওয়া হয়েছিল। 

নতুন মাস্টার প্ল্যানে হাইড্রোজেন, অ্যামোনিয়া কো-ফায়ারিং ও কার্বন ক্যাপচারের মতো এমন সব প্রযুক্তিকেও পরিবেশবান্ধব হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছে, জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা যেগুলোকে ‘ভুয়া সমাধান’ বলে অভিহিত করছেন।

বাংলাদেশের অর্থনীতির ঘাড় মটকে বিদ্যুৎ খাতকে ঘিরে চলমান অবৈধ ও ভাওতাবাজিমূলক কার্যকলাপের বৈধতা দেওয়ার নথি এই মাস্টার প্ল্যান, বলছেন তারা। নতুন এই মাস্টার প্ল্যানে ৬ হাজার ৬৬৫ মেগাওয়াটের জন্য মাত্র ৪ বছরের মধ্যে ১১টি এলএনজি বিদ্যুৎ কেন্দ্র বানানোর পরিকল্পনা রাখা আছে। 

“এত এত জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভর বিদ্যুৎ কেন্দ্র বানানোর সমস্যা হচ্ছে, এর ফলে বিদ্যুতের মিশ্রনে (কোন খাত থেকে কত বিদ্যুৎ আসবে) নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের জন্য কোনো জায়গাই থাকছে না,” বলেছেন ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিকস অ্যান্ড ফাইনেন্সিয়াল এনালিসিসের শফিকুল আলম। 

ফলাফল যেটা দাঁড়াবে, তা হল- নবায়নযোগ্য উৎস থেকে বিদ্যুৎ পাওয়ার মতো অনেক বেশি কার্যকর ও সস্তা প্রযুক্তি থাকার পরও বাংলাদেশ ব্যয়বহুল জীবাশ্ম জ্বালানির খপ্পরে আটকা পড়বে। এজন্য জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা এখনই আইইপিএমপি সংশোধন করে সেটি যেন মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় তা নিশ্চিত করার তাগাদা দিয়েছেন।

Related Analysis

solar energy for bangladesh

বছরে দেশের এক বিলিয়ন ডলার বাঁচাতে পারে সৌরবিদ্যুৎ

সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন ও ব্যবহার করা গেলে বছরে এক বিলিয়ন ডলারের বেশি সাশ্রয় করতে পারে বাংলাদেশ। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে দুই হাজার মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করতে হবে এক্ষেত্রে।

Read More »