নিউজলেটার

EN

সাম্প্রতিক খবর

এশিয়ার অনেক দেশ এখন সক্ষমতার অর্ধেক বা এক-তৃতীয়াংশ বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার করে উৎপাদনে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে। সে লক্ষ্যে এগিয়েছে চীন, ভারত, পাকিস্তান ও মালয়েশিয়া। এক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়েছে বাংলাদেশ। এক দশকে দেশের মোট নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৩ শতাংশ পার হতে পারেনি। নবায়নযোগ্য জ্বালানিবিষয়ক আন্তঃরাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল রিনিউয়েবল এনার্জি এজেন্সি (আইআরইএনএ) তার সদস্যরাষ্ট্রগুলোর নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা নিয়ে একটি পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে।
গত ৫ বছরে দেশে শুধু এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) আমদানিতে ব্যয় হয়েছে ৮৫ হাজার ৬৬৭ কোটি টাকা। যদিও এই সময়ে দেশের পুরো গ্যাস ক্রয় ব্যবদ ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। অথচ মোট গ্যাসের মাত্র ২৪ শতাংশ পাওয়া গেছে এই এলএনজি থেকে। কিন্তু ব্যয় করতে হয়েছে ৭৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ গ্যাসের সমান দাম। এরপরও ব্যয়বহুল এই আমদানি বাড়াতে মরিয়া হয়ে উঠেছে সরকার।
আমদানিনির্ভর তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) ওপর নির্ভর করে দেশে গড়ে তোলা হয়েছে অনেকগুলো বিদ্যুৎ কেন্দ্র। কিন্তু গত কয়েক বছরে পণ্যটি আমদানি করতে গিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং জ্বালানি নিরাপত্তায় ঝুঁকি তৈরি হয়েছে বলে মনে করে জ্বালানি খাতের মার্কিন তথ্য সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল এনার্জি মনিটর (জিইএম)। জ্বালানি সংকটের কারণে বাংলাদেশে বিদ্যুতের লোডশেডিং এবং পর্যাপ্ত সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসিয়ে রেখে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হচ্ছে। চলমান এসব সংকট নিরসন না হলে ২০২৬ সাল পর্যন্ত ঝুঁকি পরিস্থিতির মধ্যেই বাংলাদেশকে থাকতে হতে পারে।
সরবরাহে স্বল্প অবদান রাখা এলএনজি আমদানি করতে গিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করছে জ্বালানি বিভাগ। এতে আর্থিক ঝুঁকিতে পড়েছে জ্বালানি খাত। আবার দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে স্থানীয় গ্যাস উত্তোলন ও অনুসন্ধানে বিনিয়োগ ছিল যৎসামান্য। দেশে গ্যাসের সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় চলমান সংকটের পেছনে বিষয়টি অনেকাংশেই দায়ী বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এই এলএনজিনির্ভরতা কাটিয়ে ওঠা না গেলে সামনের দিনগুলোয় বিপত্তির মাত্রা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা তাদের।
জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রসারের দাবিতে বৈশ্বিক জলবায়ু ধর্মঘট পালন করেছেন তরুণ জলবায়ুকর্মীরা। আজ শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত জলবায়ু ধর্মঘট থেকে জীবাশ্ম জ্বালানিতে অর্থায়ন বন্ধ ও এলএনজি আমদানির ওপর দেশের নির্ভরতা কমানোর দাবি তুলে ধরেন ফ্রাইডেস ফর ফিউচার বাংলাদেশ এবং ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস নামের দুটি সংগঠনের কর্মীরা।
বাংলাদেশের লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎস থেকে ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা। কিন্তু ২০২০ সালের মধ্যে মোট বিদ্যুতের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎস থেকে উৎপাদন করার পূর্ববর্তী যে লক্ষ্য ছিল, তা থেকে আমরা এখনো যোজন দূরে আছি। বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত মোট জ্বালানির মাত্র ৩ দশমিক ৭ শতাংশ আসছে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎস থেকে। ২০৪১ সালের মধ্যে নির্ধারিত নবায়নযোগ্য জ্বালানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে ২০৩১ সাল ও ২০৪১ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি সক্ষমতা হতে হবে যথাক্রমে ১৬ ও ৪০ গিগাওয়াট।
বেসরকারি খাতে বায়ু ও সৌরবিদ্যুতের আরও তিনটি কেন্দ্র অনুমোদন দিতে যাচ্ছে সরকার। বিল্ড, ওন অ্যান্ড অপারেট (বিওও) পদ্ধতিতে এ তিন বিদ্যুৎকেন্দ্রের লাইসেন্স দেয়া হবে। এর মধ্যে একটি বায়ু ও দুটি সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ২০ বছর বিদ্যুৎ কেনা হবে। এ তিন কেন্দ্র থেকেই বিদ্যুৎ কেনা হবে ডলারে। যদিও দেশে বড় ধরনের ডলার সংকট রয়েছে। বর্তমানে ডলার সংকটে আদানিসহ বিভিন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিল দিতে পারছে না সরকার। এ তিন বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কোনো ক্যাপাসিটি চার্জ দেয়া হবে না। ‘নো ইলেকট্রিসিটি নো পেমেন্ট’ (এনইএনপি) তথা বিদ্যুৎ উৎপাদন নাই, মূল্যও নাই ভিত্তিতে কেন্দ্র তিনটির সঙ্গে চুক্তি করা হবে।