প্রস্তাবিত নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতি জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবসার স্বার্থ রক্ষা করবে

প্রস্তাবিত নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতির সংকীর্ণ লক্ষ্যমাত্রার কারণে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে না। এর বদলে জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরতা বৃদ্ধি পাবে এবং এ খাতের উদ্যোক্তারা আরও বেশি মুনাফাভোগী হবে। এতে জনগণের ওপর নতুন করে আর্থিক চাপ বাড়বে। আজ (রোববার) উপকূলীয় জীবনযাত্রা ও পরিবেশ কর্মজোট (ক্লিন)-এর উদ্যোগে রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এ কথা বলেন।

প্রস্তাবিত নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালা প্রণয়নে দায়সারা ড্রাফট

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের রিসার্চ ডিরেক্টর খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেছেন, প্রস্তাবিত নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালাটি প্রণয়নে সরকার বেশ তাড়াহুড়ো করছে। ফলে একটি দায়সারা ড্রাফট লক্ষ করা যাচ্ছে। সরকারের ভিন্ন ভিন্ন পলিসিতে ভিন্ন ভিন্ন নবায়নযোগ্য জ্বালানি পরিকল্পনা থাকায় বিনিয়োগকারীরা বিভ্রান্ত হতে পারেন। জীবাশ্ম জ্বালানির পরিকল্পনাগুলো অত্যন্ত সুসংহত হলেও নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালা ততটা সুসংগঠিত নয়। আমাদের মনে রাখতে হবে, বর্তমান জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভর অর্থনৈতিক কাঠামোর মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসার সম্ভব নয়।

২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেকর্ড এলএনজি আমদানি

২০১৮ সালে প্রথম তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি শুরু করে বাংলাদেশ। ওই বছর ২৫ এপ্রিল প্রথম জাতীয় গ্রিডে এলএনজি সরবরাহ শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের এক্সিলারেট এনার্জি। পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের সামিট অয়েল অ্যান্ড শিপিং এ ব্যবসায় যুক্ত হয়। গ্যাসের সংকটের কারণে বিশেষজ্ঞদের মতামত উপেক্ষা করেই এলএনজিতে সমাধান খোঁজার চেষ্টা করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় গত দুই বছর যুক্তরাষ্ট্র থেকে টানা বেড়েছে এলএনজি আমদানি।

নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বড় বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারে বাংলাদেশ

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে নরওয়ের সাবেক উন্নয়ন ও পরিবেশমন্ত্রী এরিক সোলহেইমের নেতৃত্বে উন্নয়ন ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের একটি প্রতিনিধি দল রবিবার (২ মার্চ) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে সাক্ষাৎ করেছেন। বাংলাদেশ সামনের বছরগুলোতে জীবাশ্ম জ্বালানি সহজীকরণে আরও মনোনিবেশ করায় প্রতিনিধিদলটি নেপালে ক্ষুদ্র আকারের সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র ও কার্বন মার্কেট, কৃষিবনায়ন এবং যৌথভাবে জলবিদ্যুৎ বিনিয়োগের সুযোগ অনুসন্ধানে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।

শিল্পখাতকে নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে স্থানান্তরের আহ্বান পরিবেশ উপদেষ্টার

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ব্যবসায়ী সমাজ ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনারা বাংলাদেশের শিল্পখাতকে জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভর উৎপাদন ব্যবস্থা থেকে নবায়নযোগ্য ও টেকসই জ্বালানির দিকে স্থানান্তরে সহায়তা করেন। গত দুই বছরে জ্বালানি সরবরাহের ঘাটতির কারণে শিল্পখাত সংকটে পড়েছে। শিল্প ও দেশের স্বার্থে দীর্ঘমেয়াদি টেকসই সমাধান খুঁজে বের করা জরুরি।

বিশ্ববাজারে ব্যাপক চাহিদা বাড়ছে প্রাকৃতিক গ্যাসের

২০২৪ সালে অন্যান্য সব জ্বালানির তুলনায় গ্যাসের ব্যবহার হয়েছে ৪০ শতাংশ বেশি। সড়ক পরিবহন এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের মতো ক্ষেত্রগুলোতে তেলের পরিবর্তে গ্যাসের ব্যবহার চালু হওয়ায় এশিয়া-প্রশান্তমহাসাগরীয় অঞ্চলে বছরান্তে এ হার বেড়েছে ৪৫ শতাংশ। যদিও চাহিদার বিপরীতে গেল বছরে এলএনজির সরবরাহ বেড়েছে আড়াই শতাংশ বা ১৩ বিলিয়ন কিউবিক মিটার।

এলএনজিতে সমাধান দেখছে এ সরকারও

গ্যাসের ঘাটতি মেটাতে এলএনজির আমদানি বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। গত বছরের চেয়ে ৩১ কার্গো বেশি এলএনজি কেনা হবে। এ জন্য বাড়তি ভর্তুকি লাগবে ১৬ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া দীর্ঘমেয়াদি এলএনজি আমদানির বিষয়ে একাধিক দেশের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। শিগগিরই ব্রুনাইয়ের সঙ্গে চুক্তি সই করবে বাংলাদেশ। পাশাপাশি দ্বীপ জেলা ভোলার গ্যাস এলএনজি করে নদীপথে মূল ভূখণ্ডে আনা হবে। এ জন্য শিগগির দরপত্র ডাকা হবে বলে জানিয়েছে জ্বালানি বিভাগ সূত্র।

সমন্বিত জ্বালানি, বিদ্যুৎ মহাপরিকল্পনা শীর্ষক সেমিনার ও গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন

১লা ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ ‘বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ে আইনি সংকলন’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন এবং ‘জ্বালানি খাত পরিকল্পনা ও আইনি কাঠামো: সমন্বিত জ্বালানি ও বিদ্যুৎ মহাপরিকল্পনার প্রেক্ষাপট’- এর উপর গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই আয়োজনে দেশের বিশিষ্ট আইনজ্ঞ, শিক্ষাবিদ এবং জ্বালানি খাতের বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন।

অদৃশ্য খরচে মহাদামি সৌরবিদ্যুৎ

সহজলভ্য সৌরবিদ্যুৎ বাংলাদেশে অদৃশ্য খরচের কারণে ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, পাকিস্তান ও ভিয়েতনামের তুলনায় বাংলাদেশের সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় দুই থেকে তিন গুণ পর্যন্ত বেশি। এমনকি দেশের বড় বড় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর চেয়েও সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন ব্যয় বেশি হচ্ছে। তাই সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে অস্বাভাবিক ব্যয় নিয়ে অস্বস্তিতে রয়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)।

জ্বালানির অভাবে বিদ্যুতের হাঁসফাঁস হবে এই গরমেও

বিগত সরকারের ভুল নীতি ও দুর্নীতির কারণে আসন্ন গরম মৌসুমে বিদ্যুতের চাহিদা এবং সরবরাহের মধ্যে বড় ঘাটতি থাকবে বলে প্রায় নিশ্চিত করেছেন বিদ্যুৎ খাত সংশ্লিষ্টরা। কেননা পর্যাপ্ত বিদ্যুতের জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণে জ্বালানি আমদানির জন্য যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দরকার তার সংস্থান নেই। শিগিগরই অর্থের জোগান দেওয়া যাবে বলেও পূর্বাভাস নেই। এমন বাস্তবতায় আসন্ন গরম মৌসুমে দৈনিক প্রায় ৪ হাজার মেগাওয়াট পরিমাণ লোডশেডিং হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফলে বাড়বে জনভোগান্তি।