বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতের কয়েক ডজন বেসরকারি বিনিয়োগকারী হঠাৎ দেখতে পান, তিন বছর আগের তুলনায় তাদের আয় ৩০ শতাংশ বেড়ে গেছে। কারণ আর কিছুই নয়, ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্য কমে যাওয়া।
ইমরান হোসেন
এক ডলারের বিনিময় মূল্য এখন অন্তত ১১৯ টাকা, বছর তিনেক আগেও যা ছিল ৮৪। বিদ্যুৎ খাতের বিনিয়োগকারীরা সরকারের সঙ্গে চুক্তিতে ডলারে ক্যাপাসিটি চার্জ নেওয়ার এই সুবিধা আদায় করে নিয়েছেন, অথচ তাদের বিনিয়োগ ডলারে ছিল না, ছিল টাকায়।
ক্যাপাসিটি চার্জ হচ্ছে মহা বিতর্কিত সেই বিধান, যার মাধ্যমে মাত্রই বিদায় হওয়া আওয়ামী লীগ সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন হোক বা না হোক বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের সর্বোচ্চ লাভ নিশ্চিতের সুযোগ করে দিয়েছিল। গত তিন বছরে আমাদের ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধের পরিমাণ ১০০ শতাংশের (দ্বিগুণ) বেশি বেড়েছে; বাড়তি এই খরচের অন্যতম কারণ হচ্ছে নতুন নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র যুক্ত হওয়া, যেগুলোর বেশিরভাগই এই ক্যাপাসিটি চার্জের সুবিধা পেয়েছে।
বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম তিন-চতুর্থাংশ পর্যন্ত কমে যাওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশে বিদ্যুৎ খাতের ব্যয় হু হু করে বেড়েছে, যার ফলশ্রুতিতে এ খাতে গত তিন বছরে ভর্তুকি বাড়াতে হয়েছে ১৫৮ শতাংশ, পাশাপাশি জ্বালানির দামও নিয়মিত বাড়ানো হয়েছে।
“বাংলাদেশের বিদ্যুৎ চুক্তিগুলো করাই হয়েছে একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে সুবিধা দেওয়ার জন্য, যেন তারা চুক্তির ফাঁকফোকর দিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ কামিয়ে নিতে পারে,” বলেছেন বাংলাদেশ ওয়ার্কিং গ্রুপ অন ইকোলজি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের সদস্য সচিব হাসান মেহেদি।
বাংলাদেশ যে এখন ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে নিমজ্জিত, তার পেছনে ডলারখেকো বিদ্যুৎ খাতকে অন্যতম দায়ী বলে মনে করেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। অগাস্টের শুরুতে যে গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার স্বৈরতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার পতন হয়েছে, তাতে এই অর্থনৈতিক সংকটই বড় ভূমিকা পালন করেছিল।
২০০৯ সালে ক্ষমতা নেওয়ার পর শেখ হাসিনার শাসনকালে ‘কুইক এনহেন্সমেন্ট অব ইলেকট্রিসিটি অ্যান্ড এনার্জি সাপ্লাই অ্যাক্ট, ২০১০’ নামক এক দায়মুক্তি আইনের আওতায় প্রায় শ’ দেড়েক নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৬ গুণেরও বেশি বাড়িয়ে ফেলা হয়। ওই দায়মুক্তি আইনটি প্রথমে দুই বছরের জন্য করা হলেও পরে ৪ দফা বাড়িয়ে ১৬ বছর ধরে টানা হয়। আইনটির আওতায় কোনোরকম নিলাম ছাড়াই বিদ্যুৎ কেন্দ্র বানানোর সুযোগ দেওয়া হতো, চুক্তিগুলোও থাকতো গোপন।
চুক্তিতে বিনিয়োগকারীদের লাভ বাড়াতে অসংখ্য সুযোগ রাখার পাশাপাশি এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো স্থাপনের আগে যে ঠিকঠাক পরিবেশ সমীক্ষা হয়নি, কিংবা হলেও তাতে যে তথ্য-উপাত্তের ভয়াবহ বিকৃতি ঘটানো হয়েছিল, নানান নিরপেক্ষ প্রতিবেদনে তাও বেরিয়ে আসে।
বিদ্যুৎ খাতের এই আগ্রাসী বিস্তার, যার মধ্যে কেবল বিদ্যুৎ উৎপাদনেই বিনিয়োগ দেখা গেছে প্রায় ৩৩ বিলিয়ন ডলার, হাজারো মানুষকে ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করেছে, জীবিকা কেড়ে নিয়ে অনিশ্চিত জীবনে নিক্ষেপ করেছে, পাশাপাশি পরিবেশ ও জীববৈচিত্রকে ধ্বংস করেছে।
অগাস্টে ক্ষমতা নেওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকার প্রথমে যেসব পদক্ষেপ নেয় তার মধ্যে ছিল শেখ হাসিনার শাসনামলে দায়মুক্তি চুক্তির আওতায় যেসব বিদ্যুৎ প্রকল্প পাস হয়েছিল সেগুলো পর্যালোচনায় একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন। কমিটি এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে। ইতিমধ্যে ওই চুক্তির আওতায় চলমান কিছু প্রকল্প বাতিলও হয়েছে।
এক নজরে দায়মুক্তি আইন
এই আইনে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রীকে একচ্ছত্র ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল, মন্ত্রণালয়টি ছিলও শেখ হাসিনার হাতে। অর্থ্যাৎ, তার হাতে থাকা একচ্ছত্র ক্ষমতাবলে তিনি কোনো নিলাম ছাড়াই যার-তার সঙ্গে চুক্তি করতে পারতেন, আবার তার এইসব সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কোনো আদালতে চ্যালেঞ্জও জানানোর সুযোগ ছিল না।
আইনটির ধারা ১০-এ বলা হয়েছে, এই আইন বা আইনের অধীনে প্রণীত কোনো বিধি কিংবা কোনো সাধারণ বা বিশেষ নির্দেশের আওতায় দায়িত্ব পালন করা কোনো কর্মচারি বা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোনো ধরনের আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না। অর্থ্যাৎ, আইনটির আওতায় হওয়া সকল কর্মকাণ্ডকে সরল বিশ্বাসে হয়েছে বলে ধরে নিতে হবে।
আইনের ধারা ৬ এর উপধারা ২-তে বলা হয়েছে, মন্ত্রীর সম্মতি সাপেক্ষে একটি বিশেষ (প্রক্রিয়াকরণ) কমিটি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের যে কোনো ক্রয় বা বিনিয়োগ প্রস্তাবের ব্যাপারে সীমিত সংখ্যক কিংবা একক যে কোনো প্রতিষ্ঠান/পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ ও দরকষাকষি করতে পারবে। বিশেষ ওই কমিটিটিও করা হয়েছিল জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তা ও রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিষয়ক প্রতিষ্ঠান/সংস্থার প্রতিনিধিদের দিয়ে।
‘এই ধরনের আইন তো থাকাই উচিত না। বিশ্বজুড়ে সরকারগুলো ক্রয় প্রক্রিয়ায় যে রীতি অনুসরণ করে, আইনটি তার সঙ্গে কোনোভাবেই যায় না,’ বলেছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ইজাজ হোসেন।
কয়েকটি বিতর্কিত বিদ্যুৎ চুক্তি
বাংলাদেশের কাছে পাওনা টাকা চেয়ে সম্প্রতি ভারতের আদানি গ্রুপ ফের গণমাধ্যমের শিরোনামে এসেছে, যদিও তারা তাদের প্রাপ্যের চেয়ে ৩২ শতাংশ বেশি অর্থ চাইছে বলে ভাষ্য বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি); আদানি গ্রুপ এই কাণ্ড করতে পেরেছে বাংলাদেশের সঙ্গে হওয়া অন্যায্য চুক্তির আদলে, যে চুক্তিটি হয়েছে শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে।
ভারতীয় গ্রুপটির চেয়ারম্যান গৌতম আদানি বিদ্যুৎ বিক্রি বাবদ ৮০ কোটি ডলার দাবি করছেন, অন্যদিকে বিপিডিবি বলছে আদানির প্রকৃত পাওনা ৫৪ কোটি ৭০ লাখ ডলার। বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিতে আদানিকে ক্যালোরিফিক মান ৬,৩২২ কিলোক্যালোরি/কেজির জন্য বিল করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে, অথচ ভারতীয় গ্রুপটি ঝাড়খণ্ডে তাদের ১৬০০ মেগাওয়াট গড্ডা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে যে কয়লা পুড়িয়েছে তার ক্যালোরিফিক মান ৪,৬০০ কিলোক্যালোরি/কেজি।
কী পরিমাণ শক্তি উৎপাদন করতে পারে, তার মাত্রার ওপর ভিত্তি করে কয়লার দাম ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়। শক্তি উৎপাদনের সামর্থ্য বিবেচনায় ইন্দোনেশীয় সূচকে এক টন কয়লার দাম হতে পারে ৫০ ডলার থেকে ১৩০ ডলার পর্যন্ত। ইন্দোনেশিয়ার সূচকে সবচেয়ে বাজে কয়লার দাম পড়ে ৩১ দশমিক ৭৮ ডলার।
কয়লা যেখানকারই হোক না কেন, আদানি ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার দুটি সূচকের দাম যোগ করে তার গড়ের ভিত্তিতে বাংলাদেশের কাছে বিল চাইতে পারবে, চুক্তিতে এমন বিরল সুযোগও রাখা হয়।
অস্ট্রেলিয়ার কয়লা খুবই উচ্চ মানসম্পন্ন, ইন্দোনেশিয়ার কয়লার তুলনায় এর দামও অনেক বেশি। আদানি তার সব কয়লা ইন্দোনেশিয়া থেকেই আমদানি করে আসছে। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ভারতীয় এই শিল্পগ্রুপটি প্রতি টন কয়লার দাম চেয়েছিল ৪০০ ডলার করে, অথচ একই কয়লা তখন বাজারে মিলছিল আড়াইশ ডলারে।
চুক্তিতে আদানিকে এমনকি ছাড় দেওয়ার (ডিসকাউন্ট) বিধান থেকেও মাফ করে দেওয়া হয়। কখনও কয়লার দাম হুট করে বেড়ে গেলে এই বিধানের সুযোগে দাম কমিয়ে আনা যায়। বিশ্বজুড়ে বিদ্যুৎ চুক্তিগুলোতে কোথাও কোথাও ৫৫% ছাড় নেওয়ারও সুযোগ আছে।
বিতর্কিত বাংলাদেশি গ্রুপ এস আলমের মালিকানাধীন ১৩২০ মেগাওয়াট বাঁশখালি বিদ্যুৎ কেন্দ্র গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ ক্যাপাসিটি চার্জ পেয়েছে, অথচ কয়লা যোগাড় না হওয়ায় এটির কার্যক্রম এখন বন্ধ। প্রযুক্তিগত জটিলতার মতো বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিজস্ব ত্রুটির কারণে উৎপাদন বন্ধ থাকলেও বাঁশখালীর এই কেন্দ্র ক্যাপাসিটি চার্জ পাবে, চুক্তিতে সম্ভবত এমন সুযোগই দেওয়া আছে, জানাচ্ছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।
এস আলমের মালিকানাধীন এই কেন্দ্রটি এমন পরিবেশ সমীক্ষার (ইআইএ) ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যে সমীক্ষাটি ভুলভাল তথ্যে পরিপূর্ণ এবং বেআইনিভাবে কোথাও কোথাও তথ্য-উপাত্ত বাদও দেওয়া হয়েছে বলে হেলসিংকিভিত্তিক সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ারের (সিআরইএ) এক অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে। হয় ইচ্ছাকৃতভাবে এসব করা হয়েছে, নয়তো এমন লোকজনকে দিয়ে করানো হয়েছে যাদের পরিবেশ সমীক্ষা নিয়ে ন্যূনতম ধারণাও নেই। এই পরিবেশ সমীক্ষায় বাঁশখালী বিদ্যুৎ কেন্দ্র আর পারদের দূষণের কারণে স্বাস্থ্যের ওপর কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারবে সেটি পুরোপুরি এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।
চীনে যতখানি অনুমোদন আছে, বাঁশখালীর এই কেন্দ্রটি তার ৫ গুণ বেশি সালফার ডাই অক্সাইড ও পার্টিকুলেট ম্যাটার (পিএম) এবং ১০ গুণ বেশি নাইট্রোজেন অক্সাইড নির্গত করবে বলে সিআরইএ-র অনুসন্ধানে ধারণা দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রটি নির্মাণে সিংহভাগ বিনিয়োগই এসেছে চীন থেকে।
এই কেন্দ্র নির্মাণের সময় হাজারো পরিবার, ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাজার এমনকি একটি সরকারি হাসপাতালও উচ্ছেদ হয়েছে; এর বিরুদ্ধে সৃষ্ট বিক্ষোভে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যাপক বল প্রয়োগ করতে হয়, পুলিশের হাতে মারা যায় অন্তত ১১ জন।
সরকার ইতিমধ্যেই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির জমি ইজারা ও অর্থায়ন সংক্রান্ত চুক্তির প্রায় ৩ হাজার ১৭০ কোটি টাকা মওকুফ করেছে।
বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের যৌথ উদ্যোগে আরেক বিতর্কিত রামপাল ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মিত হয়েছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ অখণ্ড ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের সন্নিকটে। কেন্দ্রটি বানাতে যে ১ হাজার ৮৩৪ একর জায়গা লেগেছে তার বেশিরভাগই আগে চিংড়ি চায় ও কৃষিকাজে ব্যবহৃত হত।
নিম্নমানের যন্ত্রপাতি ব্যবহারের কারণে কেন্দ্রটি প্রায়ই বন্ধ থাকে; এটি নির্মাণের কারণে এলাকার অনেকেই জীবিকা হারিয়েছিলেন, পরে তাদের মধ্যে হাতেগোনা কয়েকজনকে এ কেন্দ্রে চাকরি দেওয়া হয়।
৪০ বছর চালু থাকলে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র অন্তত ৬ হাজার অকালমৃত্যু এবং ২৪ হাজার শিশুর জন্মকালীন কম ওজনের কারণ হতে পারে বলে গ্রিনপিসের এক গবেষণায় ধারণা দেওয়া হয়েছে।
সুন্দরবনে তিনটি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের একটি কেন্দ্র ও একটি রামসার পাখি সংরক্ষণাগার আছে। ২০১০ সালে এই বন প্রায় ৫ কোটি ৬০ লাখ টন কার্বন শুষে নিয়েছে বলে ধারণা করা হয়। এই বনটি শক্তিশালী সব ঘূর্ণিঝড়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ও ভারতের জন্য প্রাকৃতিক দেয়াল হয়েও দাঁড়িয়ে আছে, যার ফলে প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষের প্রাণের পাশাপাশি কোটি কোটি ডলারের জমি ও সম্পত্তিও রক্ষা পাচ্ছে।
সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ারের (সিআরইএ) অন্য এক গবেষণা বলছে, মাতারবাড়ি ফেজ-১ প্রকল্প কর্তৃপক্ষ যে পরিমাণ দূষণের অনুমতি দিয়েছে, তা চীন, ভারত ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে অনুমোদিত দূষণের চেয়ে ২৫ গুণ বেশি।
এ তো গেল আলোচিত কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের কথা। এরপর আছে সেসব বিদ্যুৎকেন্দ্র, যেগুলো বছরের পর বছর কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেও চালু থাকা বিদ্যুৎকেন্দ্রের তালিকায় আছে, এবং মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা নিয়ে ভুল ধারণা দিচ্ছে।
উদাহরণস্বরূপ, গত সরকারের আইনপ্রণেতা আসলামুল হকের (২০২১ সালে মারা যান) মালিকানাধীন মাইশা গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান সিএলসি পাওয়ার কোম্পানি নির্মিত ফার্নেস অয়েলভিত্তিক বসিলা বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বাণিজ্যিক উৎপাদনে যায় ২০১৭ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি। এর অবসরে যাওয়ার কথা ২০৩২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি। ২০১৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর প্রথমবার কেন্দ্রটির উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ হয়েছিল। আর ২০২০ সালের ১৭ মার্চের পর তারা যে আর বিদ্যুৎই উৎপাদন করেনি তা সরকারি নথিপত্রেই দেখা যাচ্ছে।
সন্দেহজনক ঋণ লেনদেনের কারণে বিতর্কের মুখে থাকা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান শিকদার গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান পাওয়ারপ্যাক হোল্ডিংস লিমিটেডের নির্মিত জামালপুর ৯৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির বাণিজ্যিক যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০১৬ সালের ২৯ নভেম্বর। ফার্নেস অয়েল-ভিত্তিক কেন্দ্রটির অবসরে যাওয়ার কথা ২০৩১ সালের ২৮ নভেম্বর, অথচ ২০২১ সালের ১০ নভেম্বর এটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। ২০২১-২২ সালে এটি সক্ষমতার মাত্র ১.৮% উৎপাদন করেছিল।