নিউজলেটার

EN

জীবাশ্ম জ্বালানিতে নির্ভরতায় বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সংকট সামনে আরও তীব্র হবে

সামনের দিনগুলোতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশের জনগনকে আবারও বিদ্যুতের বাড়তি বিল এবং ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের বিষয়ে সতর্ক করেছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে দেশে বর্তমানে ডলারের যে সংকট তৈরি হয়েছে তার পেছনে ব্যয়বহুল জ্বালানি আমদানি এবং ভুল জ্বালানি নীতির জোরালো ভূমিকা রয়েছে। এর পরেও জ্বালানি খাতে স্বনির্ভর হওয়ার উদ্যোগ না নিয়ে আরও বেশি করে ব্যয়বহুল জীবাশ্ম জ্বালানি আমদানির দিকেই বাংলাদেশ ঝুকছে।       

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের মতে ২০২৩-২৪ সালের ঘোষিত বাজেটে জ্বালানি খাত নিয়ে বর্তমান সরকারের পরিকল্পনা স্পষ্ঠ হয়েছে। ঘোষিত বাজেটে সরকার সংশ্লিষ্ট খাতে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে উত্তরণ ও সাশ্রয়ী জ্বালানি ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রায় সব রাস্তাই বন্ধ করেছে। 

এমরান হোসেন

বাংলাদেশের জ্বালানি নীতি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে আরও চাপে ফেলবে, মূল্যস্ফীতিও বৃদ্ধি পাবে। এর সাথে জীবনযাত্রার ব্যয় এখনকার তুলনায় বহুগুণ বেড়ে যাবে এবং শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোরও ক্ষতি হবে।

২০০৯ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৯ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের মধ্যে প্রায় পুরোটাই জীবাশ্ম জ্বালানীতে খরচ করা সত্ত্বেও অসহনীয় গরম এবং রেকর্ড তাপমাত্রার মধ্যেই বাংলাদেশ গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে দিনে ১০ ঘন্টা বা তারও বেশি সময় বিদ্যুতের তীব্র লোডশেডিংয়ের মুখোমুখি হয়েছে।

জ্বালানির ঘাটতি এবং দুর্বল সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থার কারণে বাংলাদেশ তার ২৪,১৪৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার অর্ধেক ব্যবহার করতে পারছে না।

বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে বিদ্যুৎ খাতে অতিরিক্ত উৎপাদন সক্ষমতার জন্য প্রায় $৯ বিলিয়ন ডলার ক্যাপাসিটি পেমেন্ট বা গচ্চা দিতে হয়েছে। শুধু তাই নয় বিশেষ আইন তৈরির মাধ্যমে জীবাশ্ম জ্বালানি ভিত্তিক অপ্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোও বাস্তবায়ন শুরু করে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল থেকে ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ গ্রহণ করেছে। তবে শুধু বিদ্যুৎ খাতেই বাংলাদেশের ২.৫ বিলিয়ন ডলারের ঋণ রয়েছে। ফলে প্রায়ই বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দিতে হচ্ছে বা তাদের উৎপাদন সক্ষমতার অর্ধেক ব্যবহার করা যাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে ইতিমধ্যেই ক্ষতির মুখে পরা বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতের লোকসান সামনে আরও বাড়বে। ফলে ২০২৩-২৪ সালে দেশের মোট ভর্তুকির এক-তৃতীয়াংশ বিদ্যুৎ খাতেই দিতে হবে।

২২ জুন প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেশের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) মতামতে বলা হয় বিশাল অতিরিক্ত রিজার্ভ (প্রায় ৫০%), বিদ্যুৎ খাতে ক্যাপাসিটি পেমেন্ট, ভর্তুকি – সব মিলিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে চাপ আরও বাড়বে। রাজধানী ঢাকায় এক সংলাপে এই প্রতিষ্ঠানেরই গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেছিলেন, “এভাবে কি সংশ্লিষ্টদের পক্ষে ব্যবসা করে টিকে থাকা সম্ভব”?

সিপিডির তথ্যনুযায়ী ১৫০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে বার্ষিক ১০ বিলিয়ন বা মাসে ৮৩৩ মিলিয়ন ডলার খরচ হিসেবে বাংলাদেশ ২০১৯ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে শুধু ফার্নেস এবং অপরিশোধিত তেল আমদানিতে অতিরিক্ত ২৭০০০ কোটি টাকা ব্যয় করেছে।

সিপিডির মতে আমদানি-নির্ভর জ্বালানি খাতের ক্রমবর্ধমান ব্যয় মেটাতে খরচ করা রিজাভের ডলারগুলো আবার সংস্থান করাটাই একটি বড় সমস্যা হতে পারে। তারা বলছে ঘন ঘন জ্বালানির দাম বৃদ্ধি স্থানীয় মুদ্রায় মুনাফা বাড়াতে পারে কিন্তু এতে ডলার সংকটের সমাধান হবে না।

সিপিডির মতে ২০২৫ সালেও বিদ্যুতের অতিরিক্ত সক্ষমতার বোঝা থাকবে এবং  সরকারিভাবে ১৯০০০ মেগাওয়াটের (আনুমানিক) চাহিদার বিপরীতে ইনস্টল করা উৎপাদন ক্ষমতা ২৭৩০০ মেগাওয়াটে পৌঁছাবে।

“২০২৫ সালে অনুমেয় বিদ্যুতের ক্যাপাসিটি চার্জ বা গচ্চা হিসেবে প্রদেয় টাকার পরিমাণ একটি অবিশ্বাস্য পরিমাণে যাবে যা আসলে আমি প্রকাশ করতে ভয় পাচ্ছি,” খন্দকার মোয়াজ্জেম বলছিলেন।

সিপিডি বলেছে যে ক্যাপাসিটি চার্জ ২০১৬-১৭ সালে ৫,৩১৬ কোটি টাকা থেকে ২০২২-২৩ সালে ২৮০০০ কোটি টাকায় বেড়েছে। গচ্চা বা ক্যাপাসিটি পেমেন্টের এই পরিমাণ একই সময়ে সরকার কর্তৃক প্রদত্ত বিদ্যুৎ খাতের ভর্তুকির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

বিদ্যুৎ খাতে সরকারের ভর্তুকি ২০১৭ সালের ৪০০০ কোটি টাকা থেকে ২০২৩ সালে ২৩,০০০ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের পরিচালন ক্ষতি ২০১৮ সালে ৬২০০ কোটি টাকা থেকে ২০২২ সালে বেড়ে ২৭,৪৭৭ কোটি টাকা হয়েছে।

মোয়াজ্জেম বলেন, “এটা স্পষ্ট যে পিডিবির লোকসান বৃদ্ধির জন্য এবং বিশাল সরকারি ভর্তুকি তৈরির জন্য ক্যাপাসিটি পেমেন্টই দায়ী”

১ জুন, ২০২৩-২৪ এর বাজেট প্রস্তাব করার সময়, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ক্যাপাসিটি চার্জ প্রত্যাহারের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিলেন যদিও তিনি বিস্তারিতভাবে কিভাবে এটি করা হবে সে বিষয়ে কিছু বলেননি। মন্ত্রী তার বাজেট ঘোষণায় অর্থমন্ত্রী বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে অনেক কথা বলেছেন এবং এর মাধ্যমে তিনি জীবাশ্ম জ্বালানী যেমন কয়লা এবং তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস নিয়েই সামনের দিনগুলোতে সরকারের যে পরিকল্পনা রয়েছে সেটি বুঝিয়ে দিয়েছেন।

অর্থমন্ত্রী আরও বলেন যে মোট ১২,০৯৪ মেগাওয়াট সক্ষমতার ৩৩ টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণাধীন রয়েছে এবং তার সরকারের সামগ্রিক ১২,৮৫৯ মেগাওয়াট সক্ষমতা সহ আরও ৫১টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। আমদানি করা জীবাশ্ম জ্বালানির উপর ভিত্তি করেই মন্ত্রী ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০,০০০ মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা নিয়েও আশা প্রকাশ করেছেন।

নতুন বাজেটে নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিয়ে নিদিষ্টভাবে কোন পরিকল্পনা নেই, বরং নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং দেশীয় কয়লা উত্তোলনকে উৎসাহিত করা হয়েছে। যেখানে ২০০৯ সাল থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় পাঁচ গুণ বেড়েছে সেখানে বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার মাত্র চার শতাংশ নবায়নযোগ্য শক্তি থেকে আসে।

অর্থমন্ত্রী, জীবাশ্ম জ্বালানী ব্যবসায়ীদের অনুরোধে বাজেটে পেট্রোলিয়াম পণ্য এবং ফার্নেস অয়েল আমদানিতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট এবং ৫ শতাংশ অগ্রিম কর প্রত্যাহার করার প্রস্তাব করেছিলেন, যা জীবাশ্ম জ্বালানী বিনিয়োগকারী এবং ভোক্তাদের সম্ভাব্য লাভ বাড়িয়েছে। অন্যদিকে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের মালামালে আমদানি কর অবশ্য অপরিবর্তিত রয়েছে।

“এটি সত্যিই আশ্চর্যজনক ছিলো, বিশেষ করে নবায়নযোগ্য শক্তির প্রসারে সরকারের নানা প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরে,” , দীপল চন্দ্র বড়ুয়া, নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিনিয়োগকারী ও ব্রাইট গ্রীন ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন৷

সৌর বিদ্যুতের ছোট প্রকল্পে ব্যবহার করা হলে এর একটি অংশ ইনভার্টার আমদানিতে ৩৭ শতাংশ শুল্ক দিতে হয় যেখানে সৌর প্রকল্পে ব্যবহৃত অ্যালুমিনিয়াম ফ্রেম আমদানির জন্য ৫৮.৬ শতাংশ এবং আরেকটি উপাদান ওয়াকওয়ে আমদানিতে ১৫.২৬ শতাংশ শুল্ক প্রদেয়।

নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের প্রসার আটকে থাকবে বলে আশংকা করে দীপল চন্দ্র বড়ুয়া বলেন “প্রকল্পে বাড়তি ব্যয় নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করে।” তিনি নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে লভ্যাংশ প্রদানের বিষয় উল্লেখ করেন।

নবায়নযোগ্য শক্তি বিশেষজ্ঞরা অনুমান করেছেন যে সেচ পাম্পগুলোতে ডিজেলের বদলে সৌর শক্তি ব্যবহার করলে বছরে ৩.৫ মিলিয়ন টন ডিজেল বেচে যেতে পারে, যা ১ বিলিয়ন ডলারের সমতুল্য।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট অফ এনার্জি ইকোনমিক্স অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিস (আইইএফএ) এক প্রতিবেদনে বলেছে যে বাংলাদেশ দিনে ১৭০০মেগাওয়াট থেকে ৩৪০০মেগাওয়াট সৌর শক্তি এবং ২৫০০ থেকে ৪০০০ মেগাওয়াট বায়ু শক্তি উৎপাদন করতে পারে। এতে ব্যয়বহুল তেল-ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবহার কমবে।

বার্ষিক ১.৭১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে যা ২০২১-২২ অর্থ বছরে বিদ্যুৎ খাতে দেয়া ভর্তুকির ২.৮২ বিলিয়ন ডলার থেকে কম, বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদন করতে পারে, আইইএফএ এর এক প্রতিবেদনে এমনটা বলা হয়েছে। কিন্তু বর্তমান সরকারের নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসার নিয়ে তেমন জোরালো আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না।

উদাহরণস্বরূপ, খসড়া ইন্টিগ্রেটেড এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার মাস্টার প্ল্যানের (আইইপিএমপি) কথা বলা যেতে পারে যেখানে ২০৪১ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য শক্তি থেকে মাত্র ৫২৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

আইইপিএমপি বরং ব্যয়বহুল ক্লিনার এনার্জি যেমন হাইড্রোজেন, কার্বন ক্যাপচার এবং অ্যামোনিয়া প্রযুক্তিতে জোর দিয়েছে। জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা এসব ক্লিনার এনার্জিগুলোকে একরকম ধোকাই বলেছেন কারণ সেগুলো কোস প্রমাণিত প্রযুক্তি নয় এবং সেগুলোর ব্যবহারে কার্বন ডাই অক্সাইডও নির্গত হয়।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষক ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ইজাজ হোসেন বলেন, “সরকারের ভুল জ্বালানি নীতি মনে হচ্ছে একটি স্থায়ী পরিকল্পনা। আমি ভাবছি সরকার কিভাবে ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের সক্ষমতা ব্যবহারের পরিকল্পনা করছে যেখানে বেশিরভাগই বিদ্যুৎ প্রকল্পে আমদানি করা জীবাশ্ম জ্বালানিই ব্যবহার করা হবে।”

দুর্বল জ্বালানি ও খনিজ বিভাগের বরাদ্দ দেশীয় গ্যাস সম্পদের প্রতি সরকারের অবহেলার প্রতিফলন। ২০০৯ সাল থেকে মাত্র ১৯ টি কূপ খননের মাধ্যমে দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধান করা হয়েছে যদিও সরকারের প্রতি বছর কমপক্ষে ৩ টি কূপ খননের সক্ষমতা রয়েছে।

অভ্যন্তরীণ গ্যাস অনুসন্ধানের উদ্দেশ্যে গ্যাসের ট্যারিফের মাধ্যমে সংগৃহীত ১৪০ বিলিয়ন টাকার গ্যাস উন্নয়ন তহবিল অলস পরে আছে। সরকার বরং গ্যাস উন্নয়ন তহবিল থেকে ২০ বিলিয়ন টাকা তরল প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানিতে ব্যবহার করেছে ।

বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য গ্যাস রিজার্ভ রয়েছে বলে মনে করা হয়, আন্তর্জাতিক অনুমানযায়ী এটি ৩২ টিসিএফ থেকে ৩৪ টিসিএফ এর মধ্যে রয়েছে। দেশীয় গ্যাস বর্তমানে মোট গ্যাস ব্যবহারে ৭৫ শতাংশের ভাগ রয়েছে। কিন্তু আবিষ্কৃত গার্হস্থ্য গ্যাস রিজার্ভ দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বদরুল ইমাম বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী জ্বালানি সংকট আরও বাড়বে। কোভিড মহামারী বা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ না থাকলেও জ্বালানি সংকট অনিবার্য ছিল। সঙ্কটটিকে মানবসৃষ্ট এবং ইচ্ছাকৃতভাবে জীবাশ্ম জ্বালানী ব্যবসার সুবিধার জন্য তৈরি করা হয়েছে। জীবাশ্ম জ্বালানী ব্যবসায়িক চুক্তি মানেই বিশাল অংকের কমিশন।”

একটি সমীক্ষা ২০১১ সালে স্থানীয় গ্যাস কূপের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো চিহ্নিত করেছে। কিন্তু ২০০৯ সাল থেকে বিদ্যুতের দাম তিনগুণ বৃদ্ধির পরেও যা সমন্বয় করা হয়নি, ফলে এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ মুদ্রাস্ফীতি ঘটেছে।

এর পরিবর্তে সরকার গণশুনানি উপেক্ষা করে এবং বিডিং ছাড়াই জীবাশ্ম জ্বালানি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে জ্বালানি মূল্য নির্ধারণের জন্য বিইআরসির আইন সংশোধন করে।

সরকার জীবাশ্ম জ্বালানি প্রকল্পের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জমির ব্যবস্থা করেছে। এই বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোর ফলে অনেক সময় স্থানীয় দরিদ্র সম্প্রদায়কে যথাযথ ক্ষতিপূরণ ছাড়াই উচ্ছেদ করা হয়। জীবাশ্ম জ্বালানি প্রকল্পের জন্য নেওয়া বিশাল ঋণের জন্য সরকার বিনিয়োগকারীর হয়ে নিশ্চয়তাও দিয়ে থাকে।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম বলেন, “পরিস্থিতি এমন যে, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলেও বাংলাদেশ তার বিদ্যুতের দাম কমাতে পারে না। তিনি আরও বলেন, “সরকার ভর্তুকি প্রত্যাহারের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে যার অর্থ সাধারণ মানুষের উপর জ্বালানি ব্যয়ের বোঝা আরও বাড়বে। এই পরিস্থিতি অন্যরকম হতে পারত যদি সরকার তার বিদ্যুৎ খাতে তার অদক্ষতা এবং দুর্নীতি যাচাই করতো এবং টেকসই জ্বালানিতে উত্তরণের দিকে যথাযথভাবে গুরুত্ব দিতো।”

Related Analysis

জ্বালানি সংক্রান্ত নীতিমালাগুলোর অসামঞ্জস্যই বাংলাদেশে নবানোযোগ্য জ্বালানির সম্প্রসারণে বাধা

বাংলাদেশের জ্বালানি সংক্রান্ত নীতিমালাগুলোতে, বিশেষ করে নবায়নযোগ্য জ্বালানির লক্ষ্যমাত্রা সংক্রান্ত দলিলপত্রে বিপুল অসঙ্গতি রয়েছে, যা

Read More »