ক্লিন এনার্জি তথা স্বচ্ছ জ্বালানি উৎসের উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল হওয়ার আগে আরও লম্বা সময় জীবাশ্ম জ্বালানির উপরই আস্থা রাখতে চলেছে বাংলাদেশ। এর অর্থ হল, সামনের কয়েক দশকেও ভ্রান্তিতেই ঘুরপাক খাবে দেশের জ্বালানি খাত।
ইমরান হোসেন
বাংলাদেশের নতুন প্রণীত বিদ্যুৎ-জ্বালানি পরিকল্পনায় জীবাশ্ম জ্বালানির আধিপত্য
নতুন প্রণীত সমন্বিত জ্বালানি ও বিদ্যুৎ মহাপরিকল্পনায় ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ ‘ডিকার্বোনাইজ রেডি’ বা ‘কার্বনমুক্তকরণের জন্য প্রস্তুত’ হবে বলে উল্লেখ করা হয়। যার অর্থ, আরও কয়েক দশক ধরে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে মুক্ত হতে পারছিনা আমরা। অন্যদিকে ক্লিন এনার্জি হিসেবে হাইড্রোজেন ও অ্যামোনিয়া কো-ফায়ারিংয়ের মতো প্রযুক্তিকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।
তথাকথিত ক্লিন এনার্জি প্রযুক্তিগুলি আদৌ প্রমাণিত নয় বলে জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা ইতিমধ্যে সতর্ক করেছেন। আরও বেশ কিছুদিন জীবাশ্ম জ্বালানীর ব্যবহারকে অব্যাহত রাখতেই এই ধরনের ভুল সমাধানের আশ্রয় নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তাঁরা।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ এবং স্বাধীন গবেষকরা সতর্ক করেন—নতুন প্রযুক্তিগুলি আরও বেশি ব্যয়বহুল। এসবের কাজে লাগালেই যে অতি দ্রুত গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন সম্পূর্ণ হ্রাস পাবে তা আসলে অমূলক চিন্তা। গতবছর গৃহীত বিদ্যুৎ-জ্বালানী মহাপরিকল্পনায় অপ্রমাণিত প্রযুক্তিতে বিনিয়োগের সাথে জড়িত আর্থিক ঝুঁকিগুলো এক দশকের মধ্যেই উপলব্ধ হতে শুরু করবে, বিশেষত বাংলাদেশের মতো দেশের জন্য এ ঝুঁকির সম্ভাবনা অনেক বেশি।
জীবাশ্ম জ্বালানি আমদানি ও ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে পৌঁছানোয় কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের বর্তমান স্থাপিত বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৩০ গিগাওয়াট, যার অর্ধেক কোনো না কোনো কারণে অব্যবহৃতই থেকে যায়—যেমন অর্থনৈতিক সংকটের কারণে সৃষ্ট জ্বালানি সংকট, কিংবা নিম্নমানের সরঞ্জাম এবং সঞ্চালন ও বিতরণ অক্ষমতার কারণে সৃষ্ট প্রযুক্তিগত সমস্যা এর জন্য দায়িত্ব।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ায় মুদ্রা হিসেবে টাকা দুর্বল হয়ে পড়েছে, যার ফলে দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে মুদ্রাস্ফীতি চলছে। আর এ কারণে একদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক রোলিং ব্ল্যাকআউট চালু করতে হয়েছে এবং অন্যদিকে দরিদ্র মানুষ খাবারের পাত থেকে প্রোটিন বাদ দিতে বাধ্য হয়েছে।
অফটেক হিসাব বাদ দিয়ে ২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত ১৪ বছরে বাংলাদেশ ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে ১ লাখ কোটি টাকা অর্থ পরিশোধ করেছে। শুধু ২০২১-২২ অর্থবছরেই তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস তথা এলএনজি আমদানিতে ৪০ হাজার কোটি টাকা এবং কয়লা আমদানিতে ২৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।
লুণ্ঠনমূলক জ্বালানি ব্যয়ের সাথে সামঞ্জস্য রাখতে গিয়ে বাংলাদেশ সরকার ২০০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত জ্বালানির দাম প্রায় ৩০০ শতাংশ বাড়িয়েছে, যা আরও বাড়তে পারে বলে জানানো হয়।
২০১০ সালে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মহাপরিকল্পনা পাস হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন সময় আজকের এই সংকটময় পরিস্থিতির ভবিষ্যৎবাণী করা হয়। সব সময় সেই সতর্কবাণীগুলো উপেক্ষা করে সরকার।
অতীতের মতোই, নতুন বিদ্যুৎ-জ্বালানি মহাপরিকল্পনায়ও স্বচ্ছ জ্বালানির দিকে ঝুঁকার বদলে জীবাশ্ম জ্বালানী ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলির পরিসর ক্রমাগত বৃদ্ধির পরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে উপেক্ষা করা হয়েছে।
মূলত আমদানি নির্ভর হয়ে, বাংলাদেশ ২০২৭ সালের মধ্যে ১১.১ গিগাওয়াট নতুন গ্যাস-চালিত বিদ্যুৎ শক্তি এবং ২০২৬ সালের মধ্যে ৬.৫ গিগাওয়াট নতুন কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
অন্যদিকে, ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন মিশ্রণের ৪০ শতাংশ আসবে স্বচ্ছ জ্বালানি উৎস থেকে, এবং ঐ বছর মোট স্থাপিত বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৬০ গিগাওয়াটে পৌঁছাবে। জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপরিশোধিত জ্বালানি ও অন্যান্য বিল বাবদ ৪ বিলিয়ন ডলার বকেয়া ঋণের কারণে বিদ্যুৎ-জ্বালানি মহাপরিকল্পনা স্বচ্ছ জ্বালানির মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বোঝা আরও বাড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
তথাকথিত নবায়নযোগ্য জ্বালানি
তাত্ত্বিকভাবে, অধিকতর স্বচ্ছ বিকল্প জ্বালানী দিয়ে কয়লাকে কো-ফায়ারিং করার মানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত কয়লার একটি অংশকে অ্যামোনিয়া বা বায়োমাস দিয়ে প্রতিস্থাপন করা।
অন্যদিকে প্রাকৃতিক গ্যাসের সাথে হাইড্রোজেন মিশ্রিত করার সময় গ্যাস টারবাইনে প্রবেশ করানো প্রাকৃতিক গ্যাসে হাইড্রোজেন মেশাতে হয়।
তথাকথিত অধিকতর স্বচ্ছ জ্বালানীর সাথে জীবাশ্ম জ্বালানীর প্রতিস্থাপনের জন্য বিদ্যমান অবকাঠামোর পরিবর্তন বা পুনর্নির্মাণ এবং নতুন সরঞ্জাম যুক্ত করা এবং নতুন প্রযুক্তি প্রবর্তন করা জরুরি।
হাইড্রোজেন পোড়ানোর জন্য উচ্চতর জ্বলন তাপমাত্রা এবং শীতল করার জন্য পানির বর্ধিত ব্যবহার মোকাবেলা করার জন্য নতুন সরঞ্জাম এবং অপারেশন এবং রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন।
জীবাশ্ম জ্বালানী তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে সীমিত আকারে পরিবর্তন সাধিত হলে স্বল্প হারের কো-ফায়ারিং বা মিশ্রণ সম্ভবপর হতে পারে তবে এটি গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমনে নগণ্য ভূমিকা রাখবে।
গত বছর অক্টোবরে ব্লুমবার্গ এনইএফ কর্তৃক প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা যায়, যদি দেশীয়ভাবে উৎপাদন করা না যায় তবে বাংলাদেশকে স্বচ্ছ জ্বালানি আমদানি করতে হবে যা আমদানিকৃত এলএনজি’র চেয়েও ব্যয়বহুল হবে এবং ভ্যলুচেইনের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। ব্লুমবার্গের হিসেব বলছে, আমদানি করা হাইড্রোজেন এর ব্যয় গ্যাস ক্রয়ের চেয়ে চার থেকে পাঁচগুণ বেশি হতে পারে এবং অ্যামোনিয়া কয়লার চেয়ে সাত থেকে নয় গুণ বেশি ব্যয়বহুল হতে পারে।
আমদানিকৃত হাইড্রোজেনের ব্যয় বৃদ্ধির সবচেয়ে বড় অনুঘটক হল এর রূপান্তর প্রক্রিয়া। ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে ধারণা করা হয়েছে যে হাইড্রোজেন অস্ট্রেলিয়া বা মধ্যপ্রাচ্য থেকে বাংলাদেশে অ্যামোনিয়া আকারে রপ্তানি করা হয় কারণ পণ্য পরিবহণে এটিই সবচেয়ে সাশ্রয়ী রুট।
এর জন্য হাইড্রোজেন ব্যবহার করে অ্যামোনিয়া সংশ্লেষণ প্রয়োজন। বাংলাদেশে ঢুকলে অ্যামোনিয়াকে আবার হাইড্রোজেন ও নাইট্রোজেনে রূপান্তর করতে হবে থার্মোলাইসিসের মাধ্যমে। এই রূপান্তর প্রক্রিয়াগুলি ব্যয়বহুল এবং আমদানিকৃত হাইড্রোজেন উৎপাদনে ব্যয় বাড়ায়।
হাইড্রোজেনের সবচেয়ে বড় সমস্যা হল এটি একটি খুব ছোট অণু যা অন্যান্য অণুগুলির সাথে মিশ্রিত হওয়ার জন্য সহজেই বেরিয়ে পড়ে, এবং যথাসম্ভব চেষ্টা করে বায়ুমণ্ডলে মিথেনের ঘনত্বের দিকে ধাবিত হতে। হাইড্রোজেন একটি পরোক্ষ গ্রিনহাউজ গ্যাস যা বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য কার্বন ডাই অক্সাইডের তুলনায় অনেক বেশি দায়ি।
যদি হাইড্রোজেন স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হয় তবে তার জন্য স্বচ্ছ বিদ্যুৎ ব্যবহার করে পানির ইলেক্ট্রোলাইসিস প্রয়োজন।
ব্লুমবার্গ এনইএফ’র হিসাব অনুযায়ী, ১ গিগাওয়াট রেট্রোফিটেড কম্বাইন্ড সাইকেল গ্যাস টারবাইন প্ল্যান্টে হাইড্রোজেন সরবরাহের জন্য বাংলাদেশকে ৯.৩ গিগাওয়াট সৌর প্রকল্প নির্মাণ করতে হবে। অ্যামোনিয়া হাইড্রোজেনের একটি ধরন।
ব্লুমবার্গ এনইএফ এর প্রাক্কলিত হিসাবে ১ গিগাওয়াট রেট্রোফিটেড কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য স্থানীয়ভাবে অ্যামোনিয়া সরবরাহ করতে হলে ৯.৯ গিগাওয়াট সৌর প্রকল্পের প্রয়োজন হবে।
ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সমপরিমাণ (২.১ গিগাওয়াট) বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সৌরভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চেয়ে কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রে চারগুণ বেশি ব্যয় হয়। উচ্চ তাপমাত্রায় হাইড্রোজেন বা অ্যামোনিয়ার মতো জ্বালানির পোড়ালে যে পরিমাণ নাইট্রোজেন অক্সাইড গ্যাসসমূহ নির্গত হয়, তা জীবাশ্ম জ্বালানী বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলি দ্বারা সংগঠিত নির্গমনের চেয়ে বেশি। গ্যাস পোড়ানোর এই প্রযুক্তিগুলি নাইট্রাস অক্সাইড (N2O) নির্গত করে—এটি এমন এক গ্রিনহাউজ গ্যাস যা ১০০ বছরের সময়কালে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য কার্বন ডাই অক্সাইডের চেয়ে ২৭৩ গুণ বেশি দায়ী।
হাইড্রোজেন এবং অ্যামোনিয়াও অত্যন্ত দাহ্য। হাইড্রোজেন বিশেষত ঝুঁকিপূর্ণ কারণ এটি গন্ধহীন এবং বর্ণহীন হওয়ায় সনাক্ত করা কঠিন।
হাইড্রোজেন উৎপন্নের সময় গ্রিনহাউজ গ্যাসও নির্গত হয়। নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ ব্যবহার করে পানির তড়িৎ বিশ্লেষণের মাধ্যমে উদ্ভূত হয় সবুজ হাইড্রোজেন, যা একেবারে সামান্য গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন করে বা একদমই করে না।
নীল হাইড্রোজেন, মিথেনের বাষ্প সংস্কার বা কার্বন ক্যাপচার এবং স্টোরেজের সাথে কয়লার গ্যাসিকরণ থেকে উদ্ভূত, সবুজ হাইড্রোজেনের চেয়ে বেশি নির্গমন প্রকাশ করে।
ধূসর হাইড্রোজেন নীল হাইড্রোজেনের মতো প্রায় একইভাবে উৎপাদিত হয় তবে সিসিএস ব্যবহার না করে, প্রচুর পরিমাণে কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন করে।
ব্লুমবার্গ মনে করে, যে বর্তমানে উৎপাদিত প্রায় সমস্ত হাইড্রোজেন এবং অ্যামোনিয়া ধূসর।
জাপান সেন্টার ফর এ সাসটেইনেবল এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোসাইটির একটি গবেষণা অনুসারে, কার্বন ক্যাপচার প্রযুক্তির সাথে গ্যাস-চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে এক কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যয় ধরা হয় ৮.৪ ইউএসসি, যা কয়লা দিয়ে উৎপাদন করা হলে ৪.৭ ইউএসসি এবং পারমাণবিক শক্তি দিয়ে ৫.২ ইউএসসি।
অ্যামোনিয়া সহযোগে উৎপাদন খরচ ১৭ ইউএসসি এবং হাইড্রোজেনের বেলায় ১৪ ইউএসসি।
প্রতিষ্ঠানটি মনে করে যে ১০০ শতাংশ অ্যামোনিয়া কো-ফায়ারিং কার্বন নিঃসরণকে সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ হ্রাস করতে পারে।
এক নজরে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মহাপরিকল্পনা
২০১৬ ও ২০১০ সালের পূর্ববর্তী পরিকল্পনার উপর ভিত্তি করে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সি’র (JICA) অর্থায়নে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মহাপরিকল্পনা প্রণীত হয়েছিল।
পূর্ববর্তী পরিকল্পনাগুলি বিদ্যুৎ উৎপাদন মহাপরিকল্পনা বা পিএসএমপি (PSMP) নামে পরিচিত ছিল। ২০১৬ সালের বিদ্যুৎ উৎপাদন মহাপরিকল্পনা বিশাল বিদ্যুৎ খাত সম্প্রসারণের লক্ষ্যে গ্যাস এবং কয়লা আমদানি পরিকল্পনা গ্রহণ করে। ২০১০ সালের বিদ্যুৎ উৎপাদন মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী ২০৩০ সাল থেকে ৫০ শতাংশ জ্বালানি কয়লা থেকে সংগ্রহ করার পরিকল্পনা করা হয়।
তেল এবং গ্যাসকে জ্বালানি উৎস হিসাবে কেন্দ্র করে ১৯৮৫ সালে প্রথম বিদ্যুৎ উৎপাদন মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়। ১৯৯৫ সালের দ্বিতীয় মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী স্থানীয় গ্যাসের উপর ভিত্তি করে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির ক্লাস্টার-ভিত্তিক সম্প্রসারণের পরিকল্পনা গৃহীত হয়। ২০০৫ সালের পরবর্তী বিদ্যুৎ উৎপাদন মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী দেশীয় কয়লাকে আরেকটি সম্ভাব্য জ্বালানি উৎস হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। ইউএনডিপি (UNDP) এবং এডিবি (ADB) এর অর্থায়নে প্রথম তিনটি মহাপরিকল্পনা করা হয় এবং সেগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও জাপানভিত্তিক বিদেশী পরামর্শক সংস্থার সহায়তায় প্রস্তুত করা হয়।
পরিবেশ আন্দোলনের প্লাটফর্ম বাংলাদেশ ওয়ার্কিং গ্রুপ অন্য ইকোলজি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এর সদস্য সচিব হাসান মেহেদী বলেন, “বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি পরিকল্পনাগুলি সবসময় বিদেশী পরামর্শকদের দ্বারা প্রণীত হয়েছে যারা তাদের স্বার্থ মাথায় রেখে পরিকল্পনাগুলি তৈরি করেছে।”
বাংলাদেশে ব্যবহৃত প্রায় ৯৫ শতাংশ গ্যাস টারবাইন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক জেনারেল ইলেকট্রিক কর্তৃক সরবরাহকৃত। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ গ্যাস টারবাইন সরবরাহকারীদের মধ্যে জাপান ভিত্তিক মারুবেনি এবং তোশিবা অন্যতম। ২০১০ সালের পর চীন এবং ভারত বাংলাদেশের জ্বালানি বাজারে প্রবেশ করে।
এই বছরের মার্চ মাসে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইন্সটিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিক্স অ্যান্ড ফিনান্সিয়াল অ্যানালাইসিস এর একটি প্রতিবেদনে দেখা যায়, জাপান তাদের নিজেদের উদ্বৃত্ত এলএনজি’র সমস্যাটিকে দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির উপর চাপিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে, যার মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে।